ইউনিয়নতথ্যসেবাকেন্দ্র (ইউআইএসসি) -ডিজিটালবাংলাদেশসোপান
ইউআইএসসি কী ও কেন?
ইউনিয়নতথ্য ও সেবাকেন্দ্র হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিততথ্য-প্রযুক্তিনির্ভরএকটি অত্যাধুনিক তথ্য ও জ্ঞানকেন্দ্র(টেলিসেন্টার) যারউদ্দেশ্য হলো তৃণমূলমানুষের দোরগোড়ায় সেবা নিশ্চিত করা। এ কেন্দ্র থেকেগ্রামীণ জনপদেরমানুষ খুব সহজেই তাদের বাড়ীরপার্শ্বে হাতেরকাছে সু-পরিচিতপরিবেশে জীবন ও জীবিকাভিত্তিকতথ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পায়।
গত ১১নভেম্বর ২০১০ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয় থেকে এবং জাতিসংঘউন্নয়নকর্মসূচি (ইউএনডিপি)’র প্রশাসক ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রীমিসহেলেন ক্লার্ক ভোলা জেলার চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন থেকে ভিডিওকনফারেন্সেরমাধ্যমে সারাদেশের সকল ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র (ইউআইএসসি)একযোগেউদ্বোধন করেন। এ সকল কেন্দ্র থেকে মাসে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ তথ্য ওসেবাগ্রহণ করছে। ইউআইএসসির মাধ্যমে সহজে, দ্রুত ও কম খরচে সরকারি ওবেসরকারিসেবা পাবার মাধ্যমে স্থানীয় জনগনের জীবনমানের ব্যাপক ইতিবাচকপরিবর্তন আসতেশুরু করেছে।
‘জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা’ (Service at Doorsteps)-এ ম্লোগানকে সামনে রেখেইউআইএসসির যাত্রা শুরু হয়।ইউআইএসসি প্রতিষ্ঠার ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে একটিঅবাধ তথ্য প্রবাহ সৃষ্টি করা সম্ভবপরহয়েছে, যেখানে মানুষকে আরসেবার জন্যদ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে না, বরং সেবাইপৌঁছে যাচ্ছেমানুষেরদোরগোড়ায়।অবাধ তথ্য প্রবাহ জনগনের ক্ষমতায়নের অন্যতমপূর্বশর্ত। দেশের ৪,৫০১টিইউনিয়ন পরিষদে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপনের ফলেগ্রামীণ জনগণের অবাধ তথ্যপ্রবাহে অংশগ্রহণসহ দ্রুততম সময়ে তথ্য ও সেবাপাওয়ার পথ সুগম হয়েছে।
উপকরণ:
এলাকারসর্বসাধারণের জন্য উন্নত তথ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটিইউআইএসসিতেএকাধিক কম্পিউটার ও সংশ্লিষ্ট উপকরণ রয়েছে, যা পর্যায়ক্রমেস্থাপন করাহয়েছে এবং হচ্ছে। ইউআইএসসির প্রয়োজনীয় উপকরণ আসে উদ্যোক্তারবিনিয়োগ এবংইউনিয়ন পরিষদের তহবিল (রাজস্ব খাত ও এলজিএসপি প্রকল্প) থেকে।নূন্যতমস্ট্যাবিলাইজারসহ একটি কম্পিউটার, একটি সাদাকালো প্রিন্টার, একটিকালারপ্রিন্টার, অন-লাইন সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি মডেম, একটি স্ক্যানার, একটিডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে একটি ইউআইএসসি-এর কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে শুরুকরাসম্ভব। তবে পূর্ণাঙ্গ ইউআইএসসি পরিচালনার জন্য নিম্ন লিখিত উপকরণ দরকার -
স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে কোন ইউআইএসসিতে উপরকরণ এর চেয়ে কম বা বেশি থাকতে পারে।
ইউনিয়নতথ্য ও সেবাকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে পিপিপিপি(পাবলিক-প্রাইভেট-পিপলসপার্টনারশীপ) মডেলের উপর ভিত্তি করে। প্রতিটিইউআইএসসিতে দু’জন করে স্থানীয়তরুন উদ্যোক্তা রয়েছে, যাদের মধ্যে একজন পুরুষও একজন নারী। এউদ্যোক্তারাই ইউআইএসসি পরিচালনা করে থাকেন। কিছু কিছুকেন্দ্রে একজন নারী ওএকজন পুরুষ উদ্যোক্তার পাশাপাশি আরো একজন করে নারী ওপুরুষ ‘বিকল্পউদ্যোক্তা’ হিসেবে কাজ করছে।উদ্যোক্তা ইউআইএসসি’র বেতনভুক্তকর্মী নন, প্রতিটি ইউআইএসসি’র আয়-ই উদ্যোক্তার আয়। ইউআইএসসি’তে উদ্যোক্তাএকজনবিনিয়োগকারীও বটে।
পার্টনারশীপ বা অংশীদারিত্ব:
স্থানীয়সরকার বিভাগের নেতৃত্বে ইউআইএসসিসমূহ পরিচালিত হচ্ছে।মন্ত্রিপরিষদবিভাগের নির্দেশনায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায়ইউআইএসসি’র তদারকিসহঅন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ইউআইএসসি’র প্রয়োজনীয়আইসিটি উপকরন ওউদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের অর্থ আসেএলজিডি ও বাংলাদেশকম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) থেকে। এছাড়াও বিসিসি ১০১৩টিবিদ্যুতবিহীনইউনিয়নে সোলার প্যাণেল সরবরাহ করে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদকেবিদ্যুতেরআওতায় নিয়ে এসেছে। এর বাইরে একাধিক ব্যাংক-বীমা, মোবাইলকোম্পানী, এনজিও, শিক্ষা-গবেষনা প্রতিষ্ঠান, হার্ডওয়্যার-সফটওয়্যার সমিতিপ্রভৃতি প্রতিষ্ঠানতাদের সেবা, নতুন দক্ষতা ও কারিগরী সহায়তা নিয়েইউআইএসি’র সাথে সম্পৃক্তহচ্ছে।
ইউআইএসসিএরউদ্যোক্তা/পরিচালকঃপ্রতিটিইউআইএসসিতে দু’জন (একজন পুরুষ ও একজন মহিলা) প্রশিক্ষিত/দক্ষ/উদ্যোগীউদ্যোক্তা থাকবেন, যাদের তথ্য ও সেবা সন্ধান এবং তা প্রদানে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সম্যক ধারণা ও যথাযথ জ্ঞান থাকবে। নরসিংদীজেলার ৬টি উপজেলার ৭১ টি ইউনিয়নে ইতোমধ্যে ডেস্কটপ/ল্যাপটপ কম্পিউটার, স্ক্যানার, ওয়েব ক্যাম, মডেম, প্রিন্টারসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করাহয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের জন্য দুইজন করে শিক্ষিতযুবক/যুব মহিলা নির্বাচন করে তাদেরকে জেলা পর্যায়ে নিবিড় প্রশিক্ষণেরমাধ্যমে উদ্যোক্ত হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
ইউআইএসসিব্যবস্থাপনাঃইউআইএসসিপরিচালনার জন্য ৭-৯ সদস্যের পরিচালনা কমিটি থাকবে। ইউনিয়ন পরিষদেরচেয়ারম্যান পদাধিকার বলে এই কমিটির প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এইকমিটির মেয়াদ ০২ (দুই) বছর।
ইউআইএসসিতেতথ্যওসেবারতালিকাএবংমূল্যঃইউআইএসসিরতথ্যভান্ডারে তথ্য ও সেবা থাকবে দু’ভাবে- অফলাইন ও অনলাইনে। তথ্যভান্ডারেতথ্য ও সেবা সাজানো থাকবে এনিমেশন, ভিডিও, অডিও এবং টেক্সট- এই চার ফরমেটে।
ইন্টারনেটেরমাধ্যমেতথ্য (অনলাইন):ইউআইএসসিতেইন্টারনেট সংযোগ থাকবে যার মাধ্যমে ইউনিয়নের যে কোন ব্যক্তি সারা পৃথিবীরসঙ্গে যোগযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হবেন। দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন ওয়েব সাইটথেকে প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।
অফলাইনতথ্যভান্ডারঃইন্টারনেটেরবাইরে এক বিশাল তথ্যভান্ডার থাকবে ইউআইএসসিতে। এই (অফলাইন) তথ্যভান্ডারেথাকবে থাকবে জীবিকা ভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য সেবা; যেমন- কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইন ও মানবাধিকার, কর্মসংস্থান, বাজার, বিভিন্ন সরকারী ফরমপ্রভৃতি।
বাণিজ্যিকসেবা (১)ঃইউআইএসসিতেসুলভ মূল্যে বাণিজ্যিক সেবা পাওয়া যাবে; যেমন-ই-মেইল পাঠানো, ইন্টারনেটব্রাউজিং করা, কম্পিউটার কম্পোজ করা, প্রিন্টিং করা, রঙ্গিন ছবি তোলা, স্ক্যানিং করা, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ভাড়া নেওয়া প্রভৃতি।
বাণিজ্যিকসেবা (২)ঃইউআইএসসিতেসুলভ মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণেরব্যবস্থা থাকবে। দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ হবে সহজ, সুলভ ও স্থানীয়প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন আয় বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগের ওপর; যেমন বিভিন্নখাদ্যদ্রব্য তৈরী, শিল্প উপকরণ তৈরী (যেমন মোমবাতি), টেইলারিং, বৈদ্যুতিকউপকরণ মেরামত, জৈব সার উৎপাদন প্রভৃতি।
ব্লগ (uiscbd.ning.com):
উদ্যোক্তাদেরনিজেদের মধ্যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া, আন্ত:সম্পর্ক স্থাপনএবংউদ্যোক্তাদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরসা থে দ্রুতযোগাযোগেরজন্য তৈরি করা হয়েছে ইউআইএসসি ব্লগ (uiscbd.ning.com)। ব্লগটিসারাদেশেবিস্তৃত ৪,৫০১ টি ইউআইএসসি’র ৯,০০২ জন উদ্যোক্তার জন্য এমনই একটিশক্তিশালীঅনলাইন প্লাটফরম, যেখানে উদ্যোক্তারা নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতাবিনিময় করার, সমস্যা চিহ্ণিত ও তার সমাধান খোঁজার, সমবেত ভাবে উদ্যোগগ্রহণের, স্থানীয়প্রশাসনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার, এমনকিপ্রয়োজনেনীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনা করার সুযোগ পাচ্ছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস