Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
মালয়েশিয়ায় কাজ পাবে আরো ৬০ হাজার কর্মী
বিস্তারিত

মালয়েশিয়ায় আরো বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল বুধবার মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়ায় দুই দেশের প্রতিনিধিরা প্রোটোকলটি স্বাক্ষর করেন। একই অনুষ্ঠানে দুই দেশের কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি বিষয়ে একটি চুক্তি, পর্যটন খাতে সহযোগিতা এবং শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য খাতে সহযোগিতা বিষয়ে দুটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবি, বাসস, বিডিনিউজ ও বাংলানিউজ এ খবর জানায়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে দুই প্রধানমন্ত্রীর। আলোচনার শুরুতেই মালয়েশিয়ার দুটি বিমান দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের কাছে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সফরের মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের যে ভিত তৈরি হয়েছিল, আজও তা অক্ষুণ্ন ও অব্যাহত রয়েছে বলেও একমত প্রকাশ করেন উভয় নেতা। তাঁরা দুজনই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে আরো কাজ করে যাওয়ার পক্ষে মত দেন।

পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ভিসাসংক্রান্ত চুক্তির ফলে এখন থেকে দুই দেশের অফিশিয়াল ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা বিমানবন্দরে নেমে 'অন অ্যারাইভাল ভিসা' (আগমনী ভিসা) পাবেন। অন্যদিকে জনশক্তিবিষয়ক প্রোটোকল স্বাক্ষরের ফলে মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশে ১২ হাজার বাংলাদেশির কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এটি পর্যায়ক্রমে বেড়ে ৬০ হাজারে উন্নীত হবে বলেও তিনি জানান।

বিদেশে বাংলাদেশি জনশক্তির অন্যতম বড় বাজার মালয়েশিয়া। বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন পেশায় রয়েছে। গতকাল মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির চারটি চুক্তি, এমওইউ ও প্রোটোকল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, 'বৈঠকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এটাকে আমরা আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।' তিনি বলেন, বৈঠকে বাণিজ্য ও অর্থনীতি, জনশক্তি পাঠানো ও বাংলাদেশে বিনিয়োগ- প্রধানত এই তিনটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে সমঝোতা-আলোচনা শুরু করতে দুই নেতাই সম্মত হয়েছেন। তবে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য অসমতার কথা উল্লেখ করে এটি আরো কমিয়ে আনার কথা বলেন। তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশে মালয়েশিয়া রপ্তানি করে ২১০ কোটি ডলারের পণ্য।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীও এ সময় অসম বাণিজ্যের বিষয়টি একবাক্যে স্বীকার করে নেন এবং এই বিপুল অসমতা কমিয়ে আনার পক্ষে মত দেন। বৈঠকে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্যের পরিধি আরো ব্যাপক করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়।

শহীদুল হক আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৫ সালের পর দুই থেকে যৌথ কমিশনের বৈঠক না হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী বছর, অর্থাৎ ২০১৫ সালেই ওই বৈঠক আবারও শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বৈঠকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশটিতে দুই লাখ ৯৯ হাজার বৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক অবস্থান করছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়ে উদ্বেগ জানান। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টিও সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দেন।

বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রসঙ্গও উঠে আসে। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সভাপতি পদের আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় মালয়েশিয়া। নাজিব রাজাক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিষয়টি অবহিত করেন।

বৈঠকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব দেখান।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মালয়েশিয়া সফরের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায়) পুত্রাজায়ার পারদানা স্কয়ারে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছান। সে সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। সেখানে শেখ হাসিনাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। একটি চৌকস দল শেখ হাসিনাকে 'গার্ড অব অনার' দেয়।

প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী প্রথমে একান্ত বৈঠক করেন।পরে 'পারদানা মিটিং রুমে' শুরু হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। দুই দেশের প্রতিনিধিরা ওই বৈঠকের পর চুক্তি, প্রোটোকল ও এমওইউগুলো স্বাক্ষর করেন। সফর শেষে আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

ডাউনলোড